IELTS
অনলাইনে IELTS এর জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন
এক নজরে IELTS
বিদেশে পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি কিংবা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হলে বেশিরভাগ ইংরেজিভাষী দেশে ইংরেজির দক্ষতা প্রমাণে পরীক্ষা দিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ TOEFL, IELTS, GRE, GMAT, SAT ইত্যাদির কথা বলা যেতে পারে। তবে এই সবগুলোর মধ্যে ১৩৫টিরও বেশি দেশে স্বীকৃত IELTS-ই সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়।
IELTS এর পূর্ণ রূপ হলো International English Language Testing System. IELTS অ্যাকাডেমিক ও জেনারেল এই দুই ধরনের হয়। বাংলাদেশে British Council আর IDP এই পরীক্ষা নিয়ে থাকে। মাসে ৩ বার নেওয়া হয় এই পরীক্ষা। একজন পরীক্ষার্থী যত খুশি ততবার IELTS দিতে পারেন। একবার দেয়ার পর আবার যেকোনো সময় পরীক্ষা দেয়া যায়।
সাধারণত পরীক্ষা দেয়ার দিন থেকে ১৩ তম দিনে রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়। IELTS এর রেজাল্ট দুই বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
IELTS টেস্ট ফরম্যাট
IELTS মূলত ৪টি মডিউলে সম্পন্ন হয়৷ প্রতিটি মডিউলের ব্যান্ড নম্বর সর্বোচ্চ ৯। মডিউল ৪টি হলো Listening, Reading, Writing ও Speaking. চারটি অংশে আলাদাভাবে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়। এগুলোর গড় করে সম্পূর্ণ একটি স্কোর দেওয়া হয়। ৬ কিংবা ৬ এর উপরের নম্বরকে স্ট্যান্ডার্ড নম্বর হিসেবে ধরা হয়৷ কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান IELTS স্কোর নির্দিষ্ট করে দেয়।
অনলাইনে IELTS প্রস্তুতি | How to prepare for IELTS online
যেকোনো ভাষা শেখার প্রধান শর্ত হল immersion অর্থাৎ আকণ্ঠ অবগাহন। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেমন বাংলার রাজ্যে ডুবে থাকি, তেমনি ইংরেজিতে ভালো করতে হলে ইংরেজির রাজ্যে ডুবে যেতে হবে। পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত ইংরেজিতে কথা বলা, ইংরেজি সিরিজ-সিনেমা দেখা, দিনে ইংরেজি পত্রিকা ও বই পড়ার অভ্যাস করা IELTS প্রস্তুতির জন্য অনেক সহায়ক।
Image Source: IELTS Advantage
সঠিক IELTS Test নির্বাচন
প্রফেশনাল বিভিন্ন কাজে বা ইমিগ্রেশনের জন্য সাধারণত দিতে হয় IELTS জেনারেল। ভোকেশনাল ট্রেনিং,বসবাসের উদ্দেশ্য হলেও জেনারেল ক্যাটাগরিতে IELTS দিতে হয়। অন্যদিকে, উচ্চশিক্ষার্থে, ফুলটাইম কোর্সে বাইরে পড়তে গেলে দিতে হয় IELTS একাডেমিক।
IELTS জেনারেল ও একাডেমিকের Reading আর Writing অংশে কিছু পার্থক্য থাকে। এজন্য, প্রস্তুতির প্রথমেই আপনি কোন উদ্দেশ্যে বাইরে যাচ্ছেন বা কোন IELTS টেস্টে বসতে যাচ্ছেন সেই সম্পর্কে অবগত হয়ে নিন।
টেস্ট ফরম্যাট ও প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা
IELTS টেস্টের ফরম্যাট ও প্রশ্ন পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকাটা খুব জরুরি। পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন, কত সময় বরাদ্দ থাকে, প্রত্যেক মডিউলের ফরম্যাট, ব্যান্ড স্কোর ইত্যাদি পরীক্ষার খুঁটিনাটি আগে থেকেই জেনে নেয়া উচিত। কেননা আপনি যদি পরীক্ষা সম্পর্কে ধারণাই না রাখেন, তবে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হবে না, এতে পরীক্ষায় ভালো করাটা অনেক কঠিন হয়ে দাড়াবে। তাছাড়া পরীক্ষার নিয়ম-কানুন সম্পর্কেও আগে থেকে জেনে নেয়া উচিত।
IELTS প্রস্তুতিতে পড়াশোনা
সঠিক ম্যাটেরিয়াল নির্বাচন করাটা খুবই জরুরি কেননা এর ওপর প্রস্তুতি অনেকাংশে নির্ভর করে।
বেসিক ঠিক করা:
পরীক্ষাটা যেহেতু ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণের, সেহেতু প্রথমেই ইংরেজির বেসিকটা ঠিক করে নেয়া উচিত। খুব কমন একটা প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায় যে, IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে কত সময় লাগে। এটা নির্ভর করে আপনি ইতিমধ্যে ইংরেজিতে কতটা দক্ষ। আপনার বেসিক ভালো হলে সময় তুলনামূলক কম লাগবে। এ কারণে শুরুতেই মৌলিক বিষয়-আসয়ের ওপর গুরুত্ব দিন।
ভোকাব্যুলারি বৃদ্ধি:
ভোকাব্যুলারির ব্যবহার নম্বর বৃদ্ধিতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ভোকাব্যুলারি বৃদ্ধি করতে নিয়মিত পত্রিকা পড়া যেতে পারে। বিভিন্ন ইংরেজি গল্প-উপন্যাসও এক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক। তাছাড়া ইংরেজি মুভি, সিরিজ বা টিভি শোও আপনাকে সহায়তা করবে দারুণভাবে! মনে রাখতে হবে, ভোকাব্যুলারি শেখা মানে শুধুমাত্র লেখার ক্ষেত্রে জটিল জটিল শব্দ ব্যবহার নয় বরং কথা বা কজের মধ্যেও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারাটা জরুরি।
অনুশীলন:
সত্যি বলতে অনুশীলনের বিকল্প কিছুই নেই। IELTS টেস্টে যেহেতু আপনার বলা, শোন, লেখা ও পড়ার দক্ষতা যাচাই করা হয়, তাই সবগুলো মডিউলে ভালো করতে হলে অবশ্যই বেশি বেশি প্রাকটিস ও মক টেস্ট দিতে হবে। প্রশ্ন অনুযায়ী কী ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে বা কীভাবে লিখলে ভালো হবে তা প্রাকটিস করার মাধ্যমেই বুঝা যাবে। তাছাড়া, প্রাকটিস টেস্টের মাধ্যমে নিজের অবস্থাটাও যাচাই করে ফেলা যাবে।
প্রাকটিস ম্যাটেরিয়াল:
প্রাকটিসের জন্য সঠিক ম্যাটেরিয়াল নির্বাচন করতে পারাটাও জরুরি। IELTS প্রাকটিসের জন্য বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল রয়েছে যেমন: বই, সিডি, ভিডিও প্রভৃতি। তাছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও IELTS প্রশ্ন ও প্রাকটিস ম্যাটেরিয়াল পাওয়া যায়। সেগুলো সংগ্রহ করে নিলে টেস্ট ফরম্যাট, প্রশ্ন পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো ধারণা নেয়া সম্ভব হবে পাশাপাশি প্রাকটিসও ভালো হবে।
সহায়ক বই:
লিসেনিং অংশের জন্য Cambridge-এর সিরিজটা বেশ ভালো। তবে প্রথম দুটো অর্থাৎ 1 ও 2 এর চেয়ে 3, 4, 5, 6 -এই বইগুলো তুলনামূলক বেশি ভালো। এই বইগুলো CD-সহ কিনতে হবে। চাইলে কারো কাছ থেকে পেনড্রাইভে সফট কপিও সংগ্রহ করে নিতে পারেন।রিডিং অংশের জন্য পড়তে পারেন Saifur’s-এর বই।অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মতে এই বইটি সহজ ও বোধগম্য।রাইটিং-এর জন্য ভালো বই হচ্ছে Moniruzzaman’s IELTS Writing বইটি।স্পীকিং অংশের জন্য Khan’s Cue-Card 1 ও 2 বেশ কার্যকরী। এছাড়াও:
১। http://ieltsliz.com
২। http://www.ielts-exam.net
এই দুইটি লিংকে IELTS এর বেশকিছু মডেল কোয়েশ্চেন পাবেন। এখান থেকেও প্রাকটিস করতে পারেন।
অনলাইন ওয়েবসাইট:
Writing, Reading ও Speaking এর ওপর পরিপূর্ণ ধারণা, অডিও টিউটোরিয়াল, লেসনসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সব কিছুই যুক্ত করা হয়েছে এমন কিছু সহায়ক ওয়েবসাইটের ঠিকানা:
মডিউলভিত্তিক প্রস্তুতি
রিডিং (Reading):
IELTS রিডিং অংশে ৩টি সেকশনে ৪০ টি প্রশ্ন থাকে। সময় বরাদ্দ থাকে ৬০ মিনিট।
Image Source: Buddy4Study
- প্রাকটিসের সময় অবশ্যই সময়ের দিকে খেয়াল রেখে প্রাকটিস করতে হবে।
- প্রথম ও দ্বিতীয় সেকশন, তৃতীয় সেকশনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কঠিন। এ কারণে প্রথম ও দ্বিতীয় সেকশন কম সময়ের মধ্যে শেষ করে ফেলা উচিত। তাহলে পরবর্তী সেকশনের জন্য সময় অনেকটা বেঁচে যাবে। ভোকাব্যুলারি ভালো জানা থাকলে রিডিং এর জটিল জটিল শব্দ নিয়ে সমস্যা কম হয় আর কনটেক্সট এর ভাবার্থও সহজে বুঝতে পারা যায়।
- প্যাসেজ পড়ার সময় মনে মনে প্যারাগ্রাফের সামারি সাজিয়ে নিলে ভালো হয়।
রাইটিং (Writing):
রাইটিং অংশে ২টি সেকশন: টাস্ক ১ ও টাস্ক ২।
টাস্ক ১ এ কোনো সিচুয়েশন, গ্রাফ বা ডায়াগ্রামকে ব্যাখ্যা বা এনালাইসিস করতে হয়।
দ্বিতীয় টাস্কে প্রশ্নে দেয়া বিষয়ের ওপর বর্ণনামূলক রচনা লিখতে হয়।
- রচনার মাধ্যমে লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয়। ভালো হয় রচনাটি চার থেকে পাঁচ প্যারাগ্রাফের মধ্যে লিখলে। প্যারাগ্রাফগুলো অতিরিক্ত বড় হলে পুরো লিখার মধ্যে একঘেয়েমি চলে আসে।
- অর্থপূর্ণ ও আকর্ষণীয় ইন্ট্রোডাকশন ও কনক্ল্যুশন বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করে। প্রতিশব্দ বা সিনোনিমের ব্যবহারও নম্বর বৃদ্ধিতে সহায়ক। সেই সাথে একই ধরনের শব্দের পুনরাবৃত্তি করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
লিসেনিং (Listening):
চারটি মড্যুলের মধ্যে লিসেনিং অংশটিকে সবচেয়ে সহজ হিসেবে মনে করা হয়। এই অংশে চারটি রেকর্ডিং শুনে ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় ৩০ মিনিটের মধ্যে। এক্ষেত্রে, শোনার সাথে সাথেই উত্তর লিখে ফেলতে হয়।
- রেকর্ডিং ভালোভাবে শোনাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য কয়েক সেকেন্ড মিস করে গেলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস হয়ে যেতে পারে যা নম্বর কমিয়ে দিতে পারে অনেক হারে।
- এ অংশে ভালো করতে ইংরেজি উচ্চারণ সম্পর্কে ভালো জানা থাকাটা জরুরি।
- ইংরেজি মুভি, শো, পডকাস্ট, নিউজ ইত্যাদি প্রতিনিয়ত শোনার মাধ্যমে লিসেনিং স্কিল বাড়ানো যায়।
- স্বাভাবিকভাবেই রেকর্ডিং শোনা ও পাশাপাশি উত্তর লেখাটা অনেকের জন্যই বেশ কঠিন মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে বেশি বেশি প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে এ সমস্যা কাটানো যায়।
স্পিকিং (Speaking):
স্পিকিং টেস্ট অন্যান্য তিনটি মড্যুলের এক্সাম শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে বা পরে নেয়া হয়। এই টেস্টে সময় বরাদ্দ থাকে মাত্র ১৫ মিনিটের মত। পরীক্ষকের সাথে একটি নির্দিষ্ট টপিকের ওপর কথা বলতে দেয়া হয়।
Image Source: IELTS Material
ছোটবেলা থেকে ইংরেজি লেখা ও পড়ার অভ্যাস টুকটাক থাকলেও আমাদের বেশিরভাগেরই ইংরেজি বলা বা স্পিকিং এর অভ্যাসটা হয়ে ওঠে না। এজন্য অনেকেই স্পিকিং এ খারাপ করেন। স্পিকিং এ ভালো করার জন্য:
- শুরু ও শেষের অংশটুকু ভালো বলার চেষ্টা করুন।
- একই ফ্রেজ (Phrase) ও শব্দ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
- অবশ্যই নিজের পরিবার-বন্ধুবান্ধবের সাথে বেশি বেশি স্পিকিং প্রাকটিস করুন। প্রয়োজনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও নিজে নিজে প্রাকটিস করতে পারেন।
- উচ্চারণ সঠিক হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন।
লক্ষ্য রাখতে হবে যেসব ব্যাপারে
Techpark English এ চোখ রাখুন:
অনলাইনে IELTS প্রস্তুতির জন্য নিয়মিত অধ্যয়ন, অধ্যাবসায়, টেকনিক এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পরিশ্রম করতে হবে। তাছাড়া, নিজে নিজে যেভাবেই প্রস্তুতি নিন না কেন একটি সঠিক গাইডলাইন আপনার প্রস্তুতিকে পরিপূর্ণতা দিতে পারে। এজন্য করে ফেলতে পারেন টেন মিনিট স্কুলের IELTS Course-টি। IELTS এর বিভিন্ন অংশের ফরম্যাট, প্রশ্ন সমাধান, টিপস এবং স্ট্র্যাটেজি থেকে শুরু করে ভালো ব্যান্ড স্কোর অর্জন করার টেকনিক সবই পেয়ে যাবেন এই IELTS English Course-টিতে।
আপনার বিদেশ যাত্রার শুরুটা শুভ হোক!